মোঃ তাহেরুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাঙ্গামটুকপুর ইউনিয়নের মেলাপাঙ্গা গ্রামে শুধু মাত্র একটি পন্যই বেচাকেনা হয় সেই হাটে হাটটির নাম পাগলীমার হাট। এই হাটে শুধুমাত্র কাঁচা মরিচ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য হাট বসেনা সে কারণে এই হাটটি মরিচের হাট বলেও পরিচিত এবং উত্তরাঞ্চলে বিখ্যাত মরিচের হাট বলে সকলেই জানে এবং এখানে গড়ে প্রতিদিন কেনাবেচা হয় কোটি টাকা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,

পাগলীমার হাটকে ঘিরে এ অঞ্চলে একদিকে যেমন বেড়েছে মরিচের চাষ তেমনি বেড়েছে মরিচ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা। এই হাটে ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা থেকে ও শত শত মরিচ চাষিরা মরিচ বিক্রি করতে আসেন। শুধু মরিচ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পাগলীমার হাটে রয়েছে অর্ধশত আড়তদার।

দূর-দূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় সারাদিন মুখর থাকে পাগলীমার হাটের মরিচের আড়ত। সেখান সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত চলে মরিচ কেনাবেচা আবার সন্ধায় ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মরিচ নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয় যার আনুমানিক মূল্য কোটি টাকার উপরে। আড়তদার সমিতির সভাপতি এনতাজুল হক বলেন, বছরের ৪ মাস মরিচের মৌসুম এই মৌসুমে চার মাস এই হাটটি বসে। তখন সপ্তাহে সাতদিনই চলে মরিচের কেনাবেচা।

পাইকাররা এই হাটের মরিচ নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া,খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মরিচের চাহিদা পুরন করে আসছে।তিনি আরো বলেন, এই হাটটি সমগ্র নীলফামারী জেলার একটা জনপ্রিয় হাট, এবং পাগলীমার হাট এক নামেই পরিচিত। কিন্তু হাটের উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে অবহিত করলেও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। এরই মধ্যে কৃষি বিভাগ থেকে সুদৃষ্টি দিলে কিছু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ভবিষ্যতে আমরা হাটটিকে আরো সামনের দিকে অগ্রসর করাতে পারব। সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায় চারিদিকে মরিচের ছোট-বড় স্তুপ সাজানো রয়েছে।

এবিষয়ে পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মরিচ চাষী আরিফ বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে মরিচ লাগিয়েছি এতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরই মধ্যে মরিচ বিক্রি করেছি প্রায় এক লক্ষ টাকার। এছাড়াও আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে আরও এক লক্ষ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবো বলে আমি আশাবাদী। চাষী আফজাল হোসেন জানান, এই মরিচের হাটকে কেন্দ্র করে দূর-দূরান্তের মরিচ ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ট্রাকে করে মরিচ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

এতে করে এলাকার কৃষকরাও মরিচের ভালো দাম পেয়ে মরিচ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং এই অঞ্চলে মরিচ এখন প্রধান অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ি আমিনুর বলেন, এই হাটে আমরা মাত্র চার মাস ব্যবসা করে থাকি। মরিচ সিজন শেষ হলে হাটটি জনশূন্য হয়ে পড়ে ফলে বিক্রি কমে যায়। আমরা এই চার মাসের আয় দিয়ে ১২ মাস চলি। কুষ্টিয়া থেকে আসা মরিচ ক্রেতা মজিবর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এটি উত্তরাঞ্চলের একটি বিখ্যাত মরিচের হাট। কয়েক বছর ধরে আমি এই হাট থেকে মরিচ কিনছি এবং এখান থেকে বিভিন্ন জাতের মরিচ কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছি, এখানে টাকা লেনদেনে কোনো ঝামেলা নেই।

আড়তদার রিমন বলেন, এখান থেকে মরিচ কিনে চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করা হয়।পাগলীমার হাটের মরিচ চট্টগ্রামে খুবই জনপ্রিয় বলে জানান তিনি । আড়তদার নেয়ামুল হক জানান, পাগলীমার হাট থেকে মরিচ কিনে ট্রাকে করে খুলনায় নিয়ে যায়, আমদানির ওপর নির্ভর করে মরিচের চাহিদা। তারপরও প্রতিদিন তিন-চার ট্রাক করে মরিচ খুলনায় নিয়ে গিয়ে পাইকাররা বিক্রি করছেন।তাছাড়া এই হাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ ট্রাক মরিচ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায় বলে জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনিছুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য অব্যাহত পরামর্শ এবং নির্দেশনায় এই অঞ্চলে মরিচের উৎপাদন বেড়েছে এবং কৃষকদের মরিচ চাষে উপর আস্থা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭শত ৫০ হেক্টর তার মধ্যে আমরা ৭শত ৮০ হেক্টর অর্জন করেছি। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম থাকায় চাষীরা লাভবান হচ্ছেন।